নির্বাচনের মাঠে যতই চাপ আসুক, হামলা-মামলা ও হুমকি আসুক—মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। শুক্রবার রাত ১০টায় শহরের হাজীটুলা উঁচা সড়ক এলাকায় নিজের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এ ঘোষণা দেন আরিফুল হক।
সিলেটের সদ্য সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা সফল হবে না। সিলেটের পাঁচ লাখ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনে রাজপথে নামব।’ তিনি বলেন, ‘রেজাল্টের পরেও এ নগরীর রাজপথ ছাড়ব না।’
নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি অতি উৎসাহী মহল কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন আরিফুল। তিনি বলেন, স্থানীয় এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে জাতীয় নির্বাচনেও তার প্রভাব পড়বে। সেটা দেশের জন্য ভালো হবে না। দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা প্রসঙ্গে আরিফুল হক বলেন, ‘সবাইকে এত হয়রানি করছেন কেন। আপনারা বললে আমি সবাইকে নিয়ে কারাগারে হাজির হয়ে যাব।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে আরিফুল হক বলেন, নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে বিপদের অশনিসংকেত আঁচ করতে পেরে তিনি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছেন। নির্বাচনী প্রচারে থাকার কথা থাকলেও নিজের জরুরি কিছু অভিযোগ-অনুযোগ নগরবাসী ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘গত কয়েক দিন থেকে তাঁর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সব পর্যায়ের দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, গ্রেপ্তার, নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশির মাত্রা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ভোটারদের অবাধে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে আমি শঙ্কিত। ভোটের দিন আমার পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা, গ্রেপ্তার, গুম করে কেন্দ্র দখল করে ফলাফল সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও আশঙ্কা করছি।’
আরিফুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ককটেল, আগুনসন্ত্রাস ও প্রশাসনের একপেশে আচরণ বন্ধ না করলে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এসবের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে যার যার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কামরানের নির্বাচনী কার্যালয়ে বিস্ফোরণ
সিলেট নগরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চৌকিদেখি এলাকায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নির্বাচনী ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে পৌনে ১টার দিকে। আজ রাতে পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে
ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার সময় কার্যালয়ের ভেতরে থাকা নেতা-কর্মীরা জানান, তাঁরা তখন ভোটার স্লিপ তৈরিসহ নির্বাচনের নানা কাজ করছিলেন। এমন সময় হঠাৎ করেই তিনটি মোটরসাইকেলে করে হেলমেট পরা নয়জন যুবক এসে পরপর কয়েকটি ককটেল ফাটায়। কার্যালয়ে থাকা নেতা-কর্মী আর আশপাশের মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগে যুবকেরা দ্রুত আম্বরখানার দিকে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে রাতেই মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন।
ঘটনাস্থলে থাকা ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও এলাকার প্রবীণ মুরব্বিদের নিয়ে আমরা নির্বাচনের কিছু কাজ করছিলাম। এমন সময় হঠাৎ করেই ছোট এক শব্দ হয়। এরপর পর পর দুটি বিকট শব্দ হয়। এরপর যখন বাইরে যাই, দেখি তিনটি মোটরসাইকেলে করে নয়জন যুবক পালিয়ে যাচ্ছে। এসব যুবক আমাদের কার্যালয়ের সামনে ককটেল ফাটিয়ে দ্রুত সরে পড়েছে।’
সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌছুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঠিক এখনো বুঝে উঠতে পারছি না। আগে অভিযোগ পাই। এরপর খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা সব সময় ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করে, যারা জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতিতে বিশ্বাসী, যারা বিগত দিনে পেট্রল দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, গাড়ি জ্বালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে—এগুলো তাদেরই রাজনীতির সংস্কৃতির অংশ।’